একসময় রোগীর নিকটাত্মীয়কে ডোনার বা রক্তদাতা হওয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করা হতো। ধারণা করা হতো, নিকটাত্মীয় যেমন মা–বাবা, ভাইবোন বা সন্তানের রক্তই সবচেয়ে নিরাপদ। তবে এখন চিকিৎসাবিজ্ঞান ওই ধারণা থেকে দূরে সরে এসেছে।রক্ত বা রক্তের কোনো বিশেষ উপাদান দরকার হলে তা অন্য একজনের কাছ থেকে নিতে হয়।
ট্রান্সফিউশন–অ্যাসোসিয়েটেড গ্রাফট–ভার্সাস–হোস্ট ডিজিজ বা টিএ-জিভিএইচডি রক্ত পরিসঞ্চালনজনিত বিলম্বিত একটি প্রতিক্রিয়া। এটির হার অনেক কম । তবে এর প্রায় ৯৫ শতাংশ ক্ষেত্রে মৃত্যুঝুঁকি থাকে।
নিকটাত্মীয়ের রক্ত পরিসঞ্চালন করা হলে দাতার রক্তের লিম্ফোসাইট রোগী বা গ্রহীতার বিভিন্ন কোষকে আক্রমণ করে, যেমন ত্বক, অস্থিমজ্জা বা রক্তনালি। দাতার লিম্ফোসাইট গ্রহীতার শরীরে প্রবেশের ১০ থেকে ১২ দিনের মাথায় বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। রক্ত গ্রহীতার শরীরে প্রথমে লাল লাল চাকা ও দানা দেখা দেয়। এরপর জ্বর, পাতলা পায়খানা, এরপর রক্তমিশ্রিত মল ও পেটে তীব্র ব্যথা হয়।
আগে রক্ত পরিসঞ্চালন করা হয়েছিল, সে বিষয়ে সচেতন না থাকলে রোগটি শনাক্ত করা মুশকিল। ৩ থেকে ৩০ দিনের মধ্যে রক্তের সব কণিকার সংখ্যা হ্রাস পেতে থাকে। এসব উপসর্গ দেখা দেওয়ার এক থেকে তিন সপ্তাহের মধ্যে রোগীর মৃত্যু ঘটে।
সচরাচর কাদের এ রোগ হয়
যাদের অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপন করা হয়েছে এবং রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কম।
নিকটাত্মীয় রক্তদাতা হলে এইচএলএ অ্যান্টিজেনের তারতম্যের কারণে।
কীভাবে শনাক্ত করা যায়
সন্দেহ হলে ত্বকের বায়োপসি, বোনম্যারো বা অস্থিমজ্জা পরীক্ষা, লিভার বায়োপসি, রোগীর লালা, ত্বকের কোষ থেকে মলিকুলার পরীক্ষা করে রোগটি সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া সম্ভব।
কাদের রক্ত না নেওয়া উচিত
টিএ-জিভিএইচডি প্রতিরোধে নিকটাত্মীয়ের রক্ত পরিসঞ্চালন নিরুৎসাহিত করা ভালো। মা–বাবা, ভাই–বোন ও সন্তানের রক্ত না নেওয়া উচিত। এ ছাড়া নিকটাত্মীয় বা ফার্স্ট ডিগ্রি রিলেটিভ; যেমন আপন চাচা, ফুপু, খালা ও মামার রক্তও না নেওয়া ভালো।
কখন নিকটাত্মীয়ের রক্ত নেওয়া যাবে
যদি নিকটাত্মীয় দাতার রক্ত বা রক্তের উপাদান গামা রেডিয়েশনের মাধ্যমে পরিসঞ্চালন করা হয়, তাহলে রক্তের লিম্ফোসাইটগুলো অকার্যকর হয়ে যায়। তবে এ ধরনের যন্ত্র ও সুবিধা বাংলাদেশে খুবই কম।
ডা. ফারহানা ইসলাম, জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, ঢাকা